উখিয়ায় অনলাইন গেমসে আসক্ত শিশু-কিশোর : মেধাশুন্য হওয়ার আশঙ্খা

এম ফেরদৌস, উখিয়া •


করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে সারাদেশের ন্যায় উখিয়াতেও দীর্ঘদিন ধরে স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ বন্ধ থাকায় অবসর সময়ে অনলাইন ফ্রি ফায়ার ভিডিও গেইমস নিয়ে মগ্ন হয়ে পড়েছে স্কুল কলেজ,মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।

এই বেকারত্ব সময়কে কাজে লাগাতে শিক্ষার্থীরা বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন সোস্যাল নেটওয়ার্ক ও ভিডিও গেইমসের মাধ্যম।

আবার অন্যদিকে অনলাইনে স্কুল কলেজের অনলাইন ভিডিও ক্লাস করার প্রয়োজনে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের কিনে দিচ্ছেন টার্চ স্মার্টফোন। যেখানে ব্যয়বহুল সময় ধরে অনলাইনে বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদান ও গেইমস খেলার সুযোগ সুবিধা রয়েছে । তবে শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসের নাম ধরে বাবা মাকে পটিয়ে মুবাইল নিয়ে বেশির ভাগ সময় দিচ্ছে মোবাইল ফোনের ফ্রি-ফায়ার নামে ভিডিও গেমসে।

সরেজমিন দেখা যায়, উখিয়ার প্রতিটি গ্রামগঞ্জে এই গেইমস নিয়ে শিশু-কিশোর, যুবকদের দল বেধে আড্ডা।

এই ফ্রি-ফায়ার ভিডিও গেমসে আসক্ত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কী হবে? অভিজ্ঞদের মতামত, এই গেমসে নষ্ট হতে পারে ভবিষ্যৎ প্রজম্ম।

উখিয়ার সচেতন ব্যক্তিরা জানান, বর্তমান সময়ে উঠতি বয়সী শিক্ষার্থী ও তরুণরা নেশার মতো মোবাইল গেমসে আসক্ত হয়ে পড়েছে। যে সময়ে তাদের ব্যস্ত থাকার কথা পড়ালেখা ও খেলার মাঠে ক্রীড়া চর্চার মধ্যে, সেখানে তারা পড়ালেখার নাম দিয়ে টাচ মোবাইল নিয়ে গেইমস ও বিভিন্ন নেশাগ্রস্ত ইন্টারনেট অনলাইন নেটওয়ার্কিং ব্রাউজার নিয়ে।

উখিয়ার ভালুকিয়া গ্রামের ফ্রি-ফায়ার গেমসে আসক্ত স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থী মো. জিসান বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় বন্ধুদের সাথে অবসর সময় কাটাইতাম। সেখানে তাদের দেখাদেখিতে ফ্রি-ফায়ার গেইমসে খেলতে গিয়ে এখন নিজেই আসক্ত হয়ে পড়েছি। স্কুল খুললে লেখাপড়ায় মনযোগী হব।

একই এলাকার কলেজে পড়ুয়া মাহাবুব জানায়, বন্ধুদের মুখে শুনতে শুনতে ফ্রি-ফায়ার গেমসটি কি তা দেখার জন্য আগ্রহ জাগে নিজের মধ্যে। গেইমসটি দেখতে গিয়ে এখন নিজের কাছে নেশায় পরিণত হয়েছে। মাঝে মাঝে যখন নেটের কিংবা মোবাইলের সমস্যা দেখা দেয়, তখন গেমস খেলতে না পারলে নিজের মোবাইল ফোনটি ভেঙে ফেলতে ইচ্ছা হয়। এরকম একটি আনন্দদায়ক গেইমস।

ফ্রি ফায়ার গেইমস না খেলে অন্যান্য খেলা ফুটবল, ক্রিকেটসহ নানা ধরনের হেলদি বিনোদনের কাজ করা যায় না এমন এক প্রশ্নের জবাবে ফ্রি ফায়ার আশক্ত ভালুকিয়ার আলিম উদ্দিন বলেন, আমরা সব ধরণের খেলায় খেলি তবে এখন ফ্রি ফায়ার একটু বেশি খেলি। তাছাড়া ২ বছর ধরে স্কুল কলেজে যেতে না পারায় এলাকার ছেলেরা পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়েছে। এতে বেড়েছে অনলাইন গেইমসহ বিভিন্ন ধরনের নেশাগ্রস্ত কর্মকান্ড।

ভালুকিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক জানায়, দীর্ঘদিন থেকে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় গেমসে আসক্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ফ্রি-ফায়ার গেমস নিয়ে রাত-দিন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে তারা। এই গেমসটি বন্ধ করতে না পারলে মারাত্মক ক্ষতি হবে যুবসমাজ/শিক্ষার্থীদের। তাই পরিবারের অভিভাবকদের উচিত এ গেমস থেকে তাদের সন্তানদের দূরে রাখা।

উল্লেখ্য, ফ্রি ফায়ার গেইমস খেলার জন্য মায়ের কাছে এমবি কেনার টাকা ছেয়ে না দেওয়ায় চাঁদপুরের দক্ষিন উপাদী গ্রামে মামুন নামে এক কিশোর মায়ের সাথে অভিমান করে আত্মহত্যা করেন। এই খবর নিয়ে সারাদেশে এক ধরনের তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।